নদী 

পর্বত , মালভুমি , সমভূমি হল ভূমির প্রাথমিক রূপ। গিরিখাত , মন্থকূপ এবং পর্বত বা মালভূমিতে সৃষ্ট জলপ্রপাত , খরস্রোত প্রভৃতি হল দ্বিতীয় শ্রেণীর ভূমিরূপ।  এই ভূমিরূপগুলি বহির্জাত পক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এই পক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির মধ্যে একটি হল নদী। 
        নদী হল স্বাভাবিক জলধারা যা উচ্চভূমি থেকে উৎপত্তির পর বৃষ্টির জল , তুষার গলা জল , প্রস্রবনের  জল দ্বারা পুষ্ট হয়ে ভুঢাল অনুসারে ভূপৃষ্টের নির্দিষ্ট খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোন সাগর বা হ্রদে মিশে। পৃথিবীর মোট ভূভাগের প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চলে  নদীর কাজ দেখা যায়। 
        উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে যে ছোট নদী কোন বড় নদীতে এসে মিলিত হয়।  সেই ছোট নদী হল বড় নদীর উপনদী। আর মুলনদী থেকে যে জলধারা বেরিয়ে কোন সাগর , হ্রদ বা জলাশয়ে এসে পড়ে , সেই জলধারা হল মূলনদীর শাখা নদী। যেমন - গঙ্গার প্রধান শাখা নদী হল ভাগীরথী। 
        প্রধান নদী এবং তার উপনদী ও শাখা নদী মিলিত ভাবে যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং  তার বিভিন্ন কাজ করে চলেছে। সেই  অঞ্চলটি হল নদীর অববাহিকা। 
        নদী অববাহিকার মধ্যে পার্বত্য অংশে নদী যতটুকু জায়গা অধিকার করে থাকে তাকে ধারণ অববাহিকা বলে। 
        গঙ্গা নদীর অববাহিকা ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকা।  আমাজন নদের অববাহিকা পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা। 
        যে উচ্চভূমি দুই বা ততোধিক নদী আব্বাহিকাকে পৃথক করে রাখে , তাকে জলবিভাজিকা বলে। যেমন - বিন্ধ্য-সাতপুরা - মহাদেব -মহাকাল পর্বত উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা। মধ্যে এশিয়ার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা। 
        ভারতের এর দৈর্ঘ্য মোট ২,৫২৫ কিমি।  ভারতে ২,০৭১ কিমি প্রবাহ পথ আছে।  গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ হল গঙ্গা নদীর উৎস।  আর বঙ্গোপসাগরের যেখানে এই নদী পতিত হয়েছে সেই স্থান হল গঙ্গা নদীর মোহনা। 
        দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী হল গোদাবরী।  এর দৈর্ঘ্য ১,৪৬৫ কিমি। 
        লুনি, ঘাঘর, রূপনগর, মেধা, ভারতের অন্তর্বাহিনী নদী।  পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীলনদ , দৈর্ঘ্য ৬,৮৫৩ কিমি। 
        পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদী আমাজন , দৈর্ঘ্য ৬,৪৫০ কিমি।  এই নদী পৃথিবীর সর্বাধিক জল বহন করে।
        পৃথিবীর দীর্ঘতম যুগ্ম নদী মিসিসিপি - মিসৌরি।  দৈর্ঘ্য ৫৯৭০ কিমি।  
        পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম নদী ডি. নদী।  দৈর্ঘ্য ৩৭ কিমি। 
        নদী তার প্রবাহ পথে তিনটি কাজ করে - a. ক্ষয় b. বহন c. অবক্ষেপন বা সঞ্চয়। 
        নদী চারটি পক্রিয়ায় ক্ষয়কাজ করে - i. জলপ্রবাহ ক্ষয় ii. অবঘর্ষ ক্ষয় iii. ঘর্ষণ ক্ষয় iv. দ্রবণ ক্ষয় 
    i. পার্বত্য অঞ্চল জলস্রোতের প্রবল আঘাতে নদীখাত ও নদী পাড়ের অপেক্ষাকৃত নরম শিলা খুলে বেরিয়ে আসে।  একে জলপ্রবাহ ক্ষয় বলে। 
    ii. নদী বাহিত নুড়ি , পাথরের টুকরো প্রভৃতি নদীর তলদেশ ও পার্শ্বদেশে আঘাত করে উপত্যকাকে ক্ষয় করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করে।  একেই অবঘর্ষ বলে। 
    iii. নদী বাহিত বিভিন্ন আকৃতির পাথর খন্ড পরস্পরের সংঘর্ষে নুড়ি, বালি , কাদাকনায় পরিণত হওয়াকে ঘর্ষণ বলে। 
    iv. নদীর জলে উপস্থিত অম্লের প্রভাবে শিলাস্তর রাসায়নিক ভাবে বিভাজিত হয়ে ক্ষয় হওয়াকে দ্রবণ ক্ষয় বলে। 
        নদী চারভাবে ক্ষয়কাজ পদার্থ সমূহকে বহন করে - i. দ্রবণ পক্রিয়ায় বহন ii. ভাসমান পক্রিয়া iii. লমফদান পক্রিয়া iv. আকর্ষণ  পক্রিয়া 
    দ্রবণ পক্রিয়ায় জলে উপস্থিত অম্লের প্রভাবে শিলাস্তর বিভাজিত ও দ্রবীভূত হয়ে বাহিত হয়। 
    ভাসমান পক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি নদীর জলে ভাসমান অবস্থায় বাহিত হয়। 
    লমফদান পক্রিয়ায় নদী অপেক্ষাকৃত বড়ো পাথর খন্ড গুলি নদীর তলদেশে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলে। 
    আকর্ষণ পক্রিয়ায় নদী তলদেশে মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে স্রোতের টানে ছোট ছোট নুড়ি নিচের দিকে নেমে যায়। 
        নদীর বহন ক্ষমতা নির্ভর করে নদীর গতিবেগ জলের পরিমান এবং ক্ষয়জাত পদার্থের পরিমানের ওপর।  নদীর গতিবেগ দ্বিগুন হলে নদীর বহন করার ক্ষমতা ৬৪ গুন্ বেড়ে যায়।  েকে ষষ্ঠঘাতের সূত্র বলে। ১৮৪২ সালে W. Hopkins এই সূত্রটি ব্যাখ্যা দেন। 
        জলীয় বাষ্পরূপে জলভাগ থেকে বায়ুমণ্ডলে , বৃষ্টিরূপ বায়ুমণ্ডল থেকে ভূপৃষ্ঠে এবং জলপ্রবাহ রূপে ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্র জলের স্থান পরিবর্তনকে বলে জলচক্র। 
        নদীর নির্দিষ্ঠ অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ড যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউসেক বলে। যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয় তাকে কিউমেক বলে। কিউসেক হল কিউবিকফুট/সেকেন্ড এবং কিউমেক হল কিউবিকমিটার /সেকেন্ড। 
        উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ , মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ , নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ এই তিনটি গতি যুক্ত নদীকে আদর্শ নদী বলে। যেমন - ভারতের গঙ্গার উৎস গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার পার্বত্য প্রবাহ , হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান পর্যন্ত মধ্যপ্রবাহ , ধূলিয়ান থেকে মোহনা পর্যন্ত নিম্নপ্রবাহ। 
        উচ্চ গতিতে নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার সময় নদী বাহিত প্রস্তরখন্ড প্রবল বেগে নিম্নক্ষয় করে ,ফলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে 'I' আকৃতি বিশিষ্ট হয়। পরবর্তীকালে জলপ্রবাহ , ধস প্রভৃতি কারণে উপত্যকার পার্শ্বস্থ অংশ ক্ষয় হয়ে 'V' আকৃতির রূপ ধারণ করে। 
        পার্বত্য প্রবাহে বৃষ্টি বহুল অঞ্চলে পার্শ্ব ক্ষয় ও নিম্ন ক্ষয়  বেশি থাকায় উপত্যকা অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ হয়। এই উপত্যকাকে গিরিখাত বলে। নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত দেখা যায়।  দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর কলকা নদীর এল-ক্যানন-দ্যা-কলকা গিরিখাত (৩,২১৩ মি.) পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম গিরিখাত। নেপাল হিমালয়ে গণ্ডকী নদীর ওপর কালী-গণ্ডক পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত (৫,৫৭১ মি.).
        বৃষ্টিহীন শুষ্ক অঞ্চলে নিম্ন ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট  গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে। কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যানিয়ন। তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো ক্যানিয়ন পৃথিবীর গভীরতম ক্যানিয়ন।  পশ্চিমবঙ্গের গড়বেতা অঞ্চলের গনগনিকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ বেঙ্গল বলা হয়। 
  • যোগ জলপ্রপাত (শরাবতী  নদীর উপর) হল ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত। 
  • পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত হল ভেনেজুয়েলার সাল্টো এঞ্জেল। (ওরনিকো নদীর উপনদী করোনি নদীর উপর)
  • ভিক্টরিয়া জলপ্রপাত আফ্রিকার জাম্বেসি নদীতে অবস্থিত। 
  • কর্ণাটকের সিমোগা জেলার ভারাহী নদীর উপর কুঞ্চিকল হল ভারতের উচ্চতম ডবল ড্রপ জলপ্রপাত। যার উচ্চতা হল ৪৫৫ মিটার। 
ভারতের কিছু উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাত 
  • সুবর্ণরেখা নদীতে হুড্রু জলপ্রপাত (৭৫ মি.) - ঝাড়খন্ড। 
  • কাঞ্চি নদীর উপর দশম জলপ্রপাত (৪০ মি.) - ঝাড়খন্ড। 
  • নর্মদা নদীর উপর কপিলধারা জলপ্রপাত। 
  • নর্মদা নদীর উপর ধুঁয়াধার জলপ্রপাত (৩০মি.) - মধ্যপ্রদেশ। 
  • শঙ্খ নদীর উপর সাদনী জলপ্রপাত। - ঝাড়খন্ড 
  • ঝাড়খণ্ডের ভেরা নদী দামোদর নদীর উপর পতিত হয়ে সৃষ্ট হয়েছে - রাজরাপ্পা জলপ্রপাত (১০মি.) 
  • জোনহা জলপ্রপাত (৪৩মি.) গুঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত ঝাড়খন্ড। 
  • উশ্রী জলপ্রপাত (১২মি.) উশ্রী নদীর উপর অবস্থিত। 
  • মতিঝরনা জলপ্রপাত (৪৫মি.) 
  • ডুডুমা জলপ্রপাত  (১৭৫মি.) মাচকুন্দ নদীর উপর অবস্থিত। - ওড়িশা  
  • খান্দাধার জলপ্রপাত 
  • কুঞ্চিকল জলপ্রপাত (৪৫৫মি.) বারাহী নদীর উপর অবস্থিত। - কর্ণাটক 
  • যোগ জলপ্রপাত (২৫৩মি.) সরাবতী নদীর উপর অবস্থিত। - কর্ণাটক 
  • শিবসমুদ্রম (৯৮মি.)কাবেরী নদীর উপর অবস্থিত। -কর্ণাটক 
  • দুধসাগর (৩১০মি.) মান্ডবী নদীর উপর অবস্থিত গোয়া ও কর্ণাটক সীমান্ত। 
  • চিত্রকূট জলপ্রপাত (২৯মি.) ইন্দ্রাবতী নদীর উপর অবস্থিত - ছত্তিশগড়। 
  • তরথগড় (৯১মি.) কাঙ্গের নদীর উপর অবস্থিত - ছত্তিশগড়। 
  • চাচাই (১৩০মি.) বিহাদ নদীর উপর অবস্থীত - মধ্যপ্রদেশ। 
  • নোহাগাথিয়াঙ (৩১৫মি.) জলপ্রপাত বৃষ্টির জলে পুস্ট - মেঘালয়। 
  • নোকালিকাই (৩৪০মি.) জলপ্রপাত  বৃষ্টির জলে পুস্ট - মেঘালয়। 
  • জলপ্রপাত ধাপে ধাপে নেমে এলে তাকে কাসকেড বলে। জলপ্রপাতে বিপুল পরিমানে জল প্রবাহিত হলে তাকে ক্যাটারেক্ট বলে। 
  • ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সীমান্তে অবস্থিত ইগুয়াজু জলপ্রপাত পৃথিবীর সর্বাধিক বিস্তৃত (২.৭ কিমি )জলপ্রপাত। 
  • পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী হল - নীলনদ। 
  • পৃথিবীর সর্বাধিক জল বহনকারী নদী হল - আমাজন। 
  •  বৃহত্তম নদী মধ্যবর্তী দ্বীপ হল - ব্রম্ভপুত্র নদের মাজুলি। 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ হল- আমাজন নদীর ইলহা-দ্য-মারাজো। 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হল - গঙ্গা-ব্রম্ভপূত্র বদ্বীপ (সুন্দরবন) । 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা হল - আমাজন নদী অববাহিকা। 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম ও দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী হল - আমাজন (৬৪৫০ কিমি) .
  • যুগ্ম নদী হিসেবে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী হল মিসিসিপি - মিসৌরি (৫৯৭০ কিমি) .
ভারত ও বাংলাদেশের সক্রিয় বদ্বীপ অংশে সৃষ্ট সুন্দরবন , পৃথিবীর  ম্যানগ্রোভ অরণ্য। 
  • সুন্দরবনের মোট ক্ষেত্ৰমান প্রায় 10,000 বর্গকিমি। যারমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত  রয়েছে 4,100 বর্গকিমি। এর উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে 0.9 - 2.11 মিটার। 
  • 1987 সালে UNESCO এটিকে 'Biosphere Reserve' হিসাবে ঘোষণা করে। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে সুন্দরবন নামকরণ হয়। 
  • জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে সুন্দরবন অঞ্চলে - 
            i. জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এর ফলে কিছু কিছু দ্বীপ সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে নিমজ্জিত হচ্ছে। 
           ii. ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে। 
          iii. ভূমির লবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
          iv. কৃষির পরিবর্তন হচ্ছে। 
           v. ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে। 
  • সুন্দরবনের উন্নয়নের জন্য 1973 সালে 'Sundarban Development Board' তৈরি হয়। 1970 সালে UNESCO স্বীকৃত Man & Biosphere Programme' সুন্দরবনের রক্ষায় কাজ করে চলছে। 
  • ভারতের পূর্ব বাহিনী নদীগুলির মোহনায় বদ্বীপ দেখা যায়।  পশ্চিম বাহিনী নদীগুলির মোহনায় সাধারণত বদ্বীপ দেখা যায়না। 
  • দেশের প্রান্তসীমা অতিক্রম না করলে তাকে অর্থবাহিনী ও প্রান্তসীমা অতিক্রম করলে তাকে বহির্বাহিনী নদী বলে। 
  • জলপ্রপাতের তলায়  সৃষ্ট গহ্বরকে প্লাঞ্জপুল বলে। 
  • ভারতের উত্তর বাহিনী নদীগুলি বন্যা প্রবন হয়। 
  • কঠিন শিলা কম ক্ষয় পায় বলে কঠিন শিলাযুক্ত অংশে উচ্চভূমি এবং কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় হয় বলে ওইসব অঞ্চলে নিম্নভূমি সৃষ্টি হয়। 
  • ক্রান্তীয় বা নিরক্ষীয় আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে ব্যাপক রাসায়নিক আবহবিকারের জন্য ক্ষয় বেশি হয়। 
  • চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে দ্রাব্যতা বেশি হয় বলে ওইসব অঞ্চলে ক্ষয়ের হার বেশি। 

হিমবাহ 

  • বিশালাকার বরফের স্তুপ  অভিকর্ষের টানে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে এলে তাকে হিমবাহ বলে। 
  • ভারতের দীর্ঘতম তথা বৃহত্তম হিমবাহ - কারাকোরাসের সিয়াচেন। 
  • পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ - আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট। 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম ও দীর্ঘতম পার্বত্য হিমবাহ - আলাক্সার হুবার্ড। 
  • পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ - আলাস্কার মালাসপিনা। 
  • পৃথিবীর দীর্ঘতম ও বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ - ল্যাম্বার্ট 
  • পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ - আগে ছিল গ্রিনল্যান্ডের কোয়ারেক , এখন জেকবস ভ্যান (42-46 মি/দিন) । 
  • উত্তর গোলার্ধের বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ - গ্রিনল্যান্ডের স্ত্রুরস্ট্রম।
  • উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম মহাদেশীয় হিমবাহ - গ্রিনল্যান্ডের পিটারম্যান। 
  • মহাদেশীয় হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলের বরফযুক্ত পর্বতশৃঙ্গকে নুনাটাকস বলে। 
  • পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড - নরওয়ের সোজনে। 
  • সমুদ্রে ভাসমান বরফের স্তুপকে হিমশৈল বলে। 
  • ভারেতের কারাকোরাম পর্বতের বলটারো , হিসপার, সিয়াচেন, হিমালয় পর্বতের রূপাল , রিমোজেমু, গঙ্গোত্রী প্রভৃতি বিখ্যাত পার্বত্য হিমবাহ। 
  • উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের চলার পথে উৎপাটন ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় হাতলযুক্ত ডেক চেয়ারের মতো ভূমিরূপ গঠিত হয়।  এই ধরনের ভূমিরূপকে ইংল্যান্ডে করি , ফ্রান্সে সার্ক , নরওয়েতে বন , জার্মানিতে কার , ওয়েলস -এ কাম বলে। 
  • হিমবাহ ও পর্বতগাত্রের মধ্যে সৃষ্ট সংকীর্ণ ফাঁককে বার্গস্রুন্ড বলে। 
  • হিমবাহের উপর ও হিমবাহের সাথে সমান্তরাল ভাবে আড়াআড়ি ভাবে পৃষ্ঠ ফাটলকে ক্রেভস বলে। 
  • বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভস বেশিরভাগ সময়ই হালকা তুষারে ঢাকা থাকে। ফলে  বাইরে থেকে ওই  গহর গুলি অবস্থান বোঝা যায়না। এগুলি পর্বত আরোহীদের বিপদ ডেকে আনে। 
  • করি বা সার্ক থেকে হিমবাহ সরে গেলে মাঝের চামচের মতো গর্তে অবশিষ্ট বরফ গলে গিয়ে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে করি হ্রদ বলে। আন্টার্কটিকার ওয়ালকট সার্ক পৃথিবীর বৃহত্তম সার্ক। 
  • হিমবাহের মধ্যে সৃষ্ট খাদের পাশে বরফ জমে গড়ে ওঠা চূড়াকে সিরাক বলে। 
  • হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল - (i) সার্ক বা করি (ii) এরিটি বা আরেট (iii) পিরামিড চূড়া বা হর্ন (iv) কর্তিত শৈলশিরা (v) U আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী (vi) ঝুলন্ত উপত্যকা (vii) রসেমতানে (viii) ক্র্যাগ বা টেল (ix) ফিয়োর্ড 
  • উচ্চ আখ্যানসের সমুদ্র উপকূলে আংশিক ডুবে থাকা হিমবাহ উপত্যকাকে ফিয়োর্ড বলে। নরওয়ের সোজনে ফিয়োর্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড। অনেক ফিয়র্ডের সমাবেশ থাকায় নরওয়েকে 'the land of fiords' বলে। 
  • ছোট ফিয়র্ডকে ফিয়ার্ড বলে। 
  • পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ হল - (i) বহিবিধৈত সমভূমি (ii) কেটল (iii) কেটল হ্রদ (iv) কেম (v) কেমসোপান (vi) নব (vii) ভ্যালি (viii) বোল্ডার ক্লে (ix) এসকার (x) আগামুখ ইত্যাদি। 
  • যে কাল্পনিক রেখার উপরে জল জমে বরফ এবং নিচে বরফ গলে জল হয় তাকে হিমরেখা বলে। 
  • পর্বতের উচ্চ অংশের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ হল - গ্রাবরেখা। পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপটি হল - ড্রামলিন। 
  • ড্রামলিনকে 'Basket of eggs topography' বলে। 
  •  ভারতের কতকগুলি উল্লেখযোগ্য হিমবাহ হল - সিয়াচেন (60 কিমি ) , জেম (26 কিমি ), বোয়াফো (60 কিমি ), গঙ্গোত্রী (39 কিমি ), বালটোরো (60 কিমি ) , হিসপার (62 কিমি)। 

Post a Comment

0 Comments